স্বেচ্ছা মৃত্যুর সুযোগ বাংলাদেশে ও চাই

পড়াশোনা

স্বেচ্ছা মৃত্যুর সুযোগ বাংলাদেশেও চাই

অস্ট্রেলীয়ার ১০৪ বছর বয়সী বিজ্ঞানী ডেভিড গুডাল গতকাল সুইজারল্যান্ড এর লাইফ সার্কেল হাসপাতালে কষ্ট বিহীন ইনজেকশনে স্বেচ্ছা মৃত্যু বরন করেন।
আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন

“আমার সামর্থ্য দিন দিন কমে আসছে, আমি সৌভাগ্যবান যে আমার শান্তি পূর্ন জীবনাবসান হচ্ছে আগামীকাল”।
এই সফল,সুখী, প্রকৃতি প্রেমিক বিজ্ঞানী স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরনের সিদ্ধান্ত কি আপনাদের অবাক করে?

এটা কি অনুমোদন যোগ্য?

একজন সাইকিয়াট্রিস্ট হিসেবে কি আমি এমনটি সমর্থন করতে পারি?

এরকম শত প্রশ্ন অনেকের মনে জাগতে পারে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমরা সাইকিয়াট্রিস্টরা এবং আমি নিজেও প্রচুর লেখালিখি করছি। তবে মানসিক রোগের কারনে বা অন্য যে কোন আবেগতাড়িত আত্মহত্যা কখনো সমর্থন যোগ্য নয়।
কেননা তাদের যথাযথ চিকিৎসা দিলে বা তাদের মনোকষ্ট বা আবেগীয় সমস্যার সমাধান হলে তারা আত্মহত্যা করতো না,বরং জীবনকে আরো আনন্দময় ও সফল করতে সচেষ্ট হতো।

কিন্তু সেচ্ছা মৃত্যু আর আত্মহত্যা এক জিনিস নয়।

একজন মানসিক ভাবে সুস্হ ব্যক্তি ও বৃদ্ধ বয়সে সবদিক থেকে সফল ও সুখী মানুষ হয়ে ও স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ফ্রয়েড এর পর সবচেয়ে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এরিকসন তার “লাইফ সাইকেল” বা জীবন বৃত্ত তত্বে জীবনকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করেছেন। একজন পরিপূর্ণ সফল ও সুখী মানুষ শেষ ধাপে জীবন সার্কেল সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত করেন এবং যাপিত জীবন নিয়ে পূর্ন তৃপ্তি ও সন্তুষ্টি অর্জন করেন।

তখন তিনি জীবনকে পরিপূর্ণ ও সফল মনে করেন এবং আসন্ন মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকেন।
মৃত্যু তখন তার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত, ভয়ের বা আফসোসের কোন বিষয় থাকে না।
এরকম জীবন সার্কেল সফলতার সঙ্গে পূর্ন করে সুখী,আত্ম তৃপ্ত মানুষের সংখ্যা কম হতে পারে, তবে কিছু তো রয়েছে। আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই যে আমি নিজকে সেরকম পরিপূর্ণ সফল ও সুখী একজন মানুষ মনে করি।
এখন এ বয়সে মৃত্যু বা জীবনাবসান আমার জন্য খুব স্বাভাবিক।

তাই বিজ্ঞানী ডেভিড গুডালের মতন পরবর্তী কোন অসামর্থ্য বা পীড়ন থেকে মুক্ত থাকতে সফল,সুখী ও পরিপূর্ণ জীবনকে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে পোষন করলে তা ভুল বা আপত্তিজনক হওয়া উচিৎ হবে না। মনে রাখতে হবে মানসিক ও শারীরিকভাবে কাবুল হয়ে,হতাশ হয়ে, বিষন্নতার জন্য আত্মহত্যার চিন্তা আর সুস্হ অবস্হায়,তৃপ্ত পূর্ন জীবন নিয়ে শেষ বয়সে মৃত্যুকে বীরের মতন আলিঙ্গন করাকে এক করে দেখা যাবে না। আমি এখন যে কোন সময় স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরনের জন্য প্রস্তুত।

স্বেচ্ছা মৃত্যুর মাত্র ২ দিন আগেও সিএনএন কে সাক্ষাতকারে এই মহান বিজ্ঞানী বলেন
“আমি আবার যদি ঘন জঙ্গলের মধ্যে হাটতে পারতাম…..

আমি এখনো পাখির কিচিরমিচির উপভোগ করি কিন্তু দৃষ্টি শক্তির সীমাবদ্ধতার জন্য সে সৌন্দর্য দেখতে পাই না”
কি অসম্ভব জীবনী শক্তি,প্রকৃতি প্রেম ও গভীর জীবন বোধ সম্পন্ন মানুষ তিনি।

তার পক্ষেই স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরন করার মতন সাহস দেখানো সম্ভব।
এ ক্ষুদ্র মানুষটিও এ দলে
কিন্তু আমাদের দেশে সে মেডিকেলীয় ব্যবস্থা ও আইনি ব্যবস্থা অনুপস্থিত। বাংলাদেশে ও সেরকম সংস্কার চাই

লিখেছেন- প্রফেসর তাজুল ইসলাম

Related posts

Leave a Comment